হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থায় সন্তুষ্ট যুক্তরাজ্য। তিন দিনের পর্যবেক্ষণ বা অডিট কার্যক্রম শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার নিরাপত্তার প্রায় সব ক্ষেত্রে আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ঢাকা সফররত দেশটির প্রতিনিধি দল। যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টের (ডিএফটি) উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকে এ-প্লাস বলে আখ্যায়িত করেছে।
বিশেষ করে কার্গো শাখায় অপারেশন, নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে অধিক সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা। দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনকে জানাবে। শাহজালাল বিমানবন্দর নিরাপত্তার সব ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট হলেও বাংলাদেশ বিমানের লন্ডনগামী একটি ফ্লাইটের দুটি লাগেজের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন ডিএফটির প্রতিনিধিরা।
বিমান সূত্র জানায়, গত বুধবার সকালে অডিট চলাকালে বাংলাদেশ বিমানের লন্ডনগামী ওই ফ্লাইট পরিদর্শন করেস প্রতিনিধিরা। এ সময় কাগজপত্রে ৬১১টি লাগেজের কথা উল্লেখ থাকলেও তারা ৬১৩ লাগেজের অস্তিত্ব পান। এ নিয়ে তোলপাড় হয় বিমানে। অতিরিক্ত দুটি লাগেজের বিষয়ে আপত্তিও জানানো হয়।
এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুরাহা হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ডিজিএম (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার আমাদের সময়কে বলেন, ডিএফটি অডিটে যে দুটি লাগেজ বেশি পেয়েছিল সেই বিষয়টি বৃহস্পতিবার মীমাংসা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. নাইম হাসান গতকাল বলেন, ডিএফটির প্রতিনিধিরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, কার্গো ব্যবস্থাপনাসহ প্রায় সব বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা আমাদের এ-প্লাস দিয়েছেন। তবে লন্ডনগামী একটি ফ্লাইটে লাগেজসংক্রান্ত একটি ছোট্ট জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। আমি বিমান কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি সুরাহার জন্য ডিএফটির সঙ্গে আলোচনা করতে বলেছি। ওই জটিলতাও কেটে যাবে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ডিএফটির অডিট কার্যক্রম শুরু হয় গত মঙ্গলবার। এই অডিট সম্পন্ন করার জন্য ডিএফটির দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের এক কর্মকর্তাও। প্রথম দিন গত মঙ্গলবার শাহজালালের কার্গো এলাকার নিরাপত্তাব্যবস্থা মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে অডিট কার্যক্রম শুরু হয়। বুধবার বিমানবন্দরের ইউকে ফ্লাইট ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা মূল্যায়ন করে এ-প্লাস ক্যাটাগরিতে ভূষিত করেন তারা। এই কদিনে পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা বেবিচকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠকও করেন।
সূত্রটি আরও জানায়, পূর্বনির্ধারিত ডিএফটির এ পর্যবেক্ষক দলটি ঢাকায় অবস্থান করে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রতিটি পয়েন্টে সূক্ষ্ম ও তীক্ষ্ণ নজরদারি করে। শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের প্রবেশমুখ, ভেতরের স্ক্যানার সিস্টেম, চেকইন কাউন্টার, অ্যাপ্রোন, কার্গো ও চার দেয়ালের সীমান্ত এলাকার প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা পয়েন্ট পরিদর্শন করেন তারা। তাদের যেখানেই সন্দেহ হয়েছে সেখানেই গেছেন।
সবশেষে বিমানবন্দরের চারপাশের সীমানা দেয়াল পরিদর্শন করেন। কোথাও কোনো ত্রুটি আছে কিনা, এমনটি জানতে চাওয়া হয় সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে। এটিও মোটামুটি নিরাপদ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা সন্তোষজনক হওয়ায় এ যাত্রাও উতরে গেছে সিভিল এভিয়েশন। ডিএফটির ভাষায়-প্রাথমিক পরিদর্শনে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা উত্তীর্ণ।
এটি অব্যাহত রাখার ওপর জোর পরামর্শ দিয়ে প্রতিনিধি দল বলেছে-পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো। এটি ধরে রাখতে হবে এবং আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। ছয় মাস পর একই প্রক্রিয়ায় আবার পরিদর্শনে আসবে ডিএফটির টিম।